Friday, August 10, 2012

অনু গল্প by সুস্মিতা রায়




কেন কোন নারী কোনো পূরুষের জীবনের ধ্রুবতারা হয়ে ওঠে বা কেনইবা কোন নারীর জীবন বিশেষ কোন পূরুষের দ্বারা প্রভাবিত হয়, কোন সে রসায়ন কারইবা অদৃশ্য অঙ্গুলি হেলনে অন্য সকল বন্ধন ছিঁড়ে প্রেমের বাঁধনে নিজেদের বেঁধে ফেলে কেউবা জাগতিক মায়া কাটায় কেউবা জগতে থেকেও চলে যায় কল্পনার জগতে…আজো যখন দেখি মাঝে মাঝে রাস্তা থেকে ধরে বাড়ী নিয়ে যাচ্ছে প্রভাকে ওর দাদা মনটা খারাপ হয়ে যায়, বাড়ী থেকে বেরোতে দেয়না ওকে, খুব স্বাভাবিক, ওমোন আগুন আগুন ধরানো রূপ…দিনকাল ভালোনা, কোথায় কি হয়ে যাবে…আর এক কেলেঙ্কারি…চুলে সাদা অংশ বেড়েছে, মনটা এখনো সেই কুড়ি বছরে…ফলে শরীরে বয়েষের ছাপ নেই ৷
…গ্রামেরই ছেলে মেয়ে ওরা, সুরেশ দু ক্লাশ উঁচুতে পড়ত, বাবা ব্যবসায়ী, লাভ লোকসান ছাড়া বিশেষ কিছু বুঝতেন না কেবলবাবু, ভালোনাম আমাদের জানা নেই, জাতে মোড়ল..গ্রামেই তিনতলা বাড়ী,… প্রভাবতী, অসাধারন সুন্দরী, ঘনকালো মেঘের মতন চুল, পানপাতা মুখ, চিবুকে ছোট্টো একটা তিল, শুকনো কাঠে হাত দিলে আগুন ধরে যাবে এমন রূপ, আমরা গ্রামের ছেলে মেয়েরা ভাবতাম শাপভ্রষ্ঠা স্বর্গ সুন্দরী, সুরেশের মায়ের বিশেষ আপত্তি ছিলোনা, বরং ওমোন লক্ষ্মী প্রতিমা ঘরে না আনার কথা ভাবতেও পারতেননা কোনদিন, প্রভাবতীর বাবা অনেক বিঘা জোতজমির মালিক, দাদা স্কুল শিক্ষক, … জামাই হিসেবে সুরেশ মোটেই ফেলনা নয়, সব মেয়ের বাবারাই ওমোন পাত্র খোঁজে, এক ছেলে অগাধ সম্পত্তি, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা, চেনা পরিবার, সবথেকে বড়কথা ছেলে মেয়ে দুজনেই দুজনকে চায়, যথারীতি প্রভাবতীর বাবা একদিন প্রস্তাব নিয়ে গেলেন কেবলবাবুর বাড়ী,…আপ্যায়িত হলেননা সেভাবে প্রচ্ছন্ন অপমানিত হলেন বরং, সুরেশের মা বিষয়টাকে যে ভালোভাবে নিলেন না সেটাতঁার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিলো, কিন্তু ও বাড়ীতে কেবল বাবুই শেস কথা বলেন, “ঢালির মেয়ে আমার বাড়ীর বউ হবে না,” গ্রামের খবর রটতে বেশী সময় লাগেনা, লাগলোওনা, আরো বড় করে রং চড়িয়ে প্রচারিত হল খবরটা, সবার কানেই গেল, সুরেশ গম্ভীর হয়ে গুটিয়ে গেল নিজের ভেতর, প্রভাবতী চোখ ফুলিয়ে ফেললো, রোজ রাতে চোখের জলে বালিশ ভেজানো ছাড়া আর কিইবা করতে পারে বেচারা ৷
সম্বোন্ধ আসলো প্রভাবতীর, আসবেনাইবা কেন ? ওর দাদারই স্কুলের শিক্ষক, বিয়ের দিন ঠিক হয়ে গেলো,…সব খবরই যাচ্ছে সুরেশের কানে, দেখাসাক্ষ্যাত বন্ধ হলেও চিঠি পত্রের আদান প্রদানে কোনো খামতি ছিলোনা, আমরা কয়েকজন অকালপক্ক ছেলেমেয়ে পত্র বাহক বাহিকার কাজ পেয়েছিলাম,…বৈশাখে বিয়ে, গম্ভীর এবং চুপচাপ হয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনোরকম পতিক্রিয়া দেখা যায়নি দুজনের মধ্যেই, সুরেশের মায়ের মন বুঝেছিলো কোথাও একটা ছন্দোপতন, কোনো একটা অশনি সংকেত, কূ ডাক ডেকেছিলো মায়ের মন,… প্রভাবতীর বাড়ীর লোক বোঝেনি, বলেছিলো “প্রভা আমাদের বুঝদার মেয়ে…, বিয়ের কেনাকাটার জন্য, বন্ধুদের নিমন্ত্রকরবার জন্য, বান্ধবিদের সাথে দেখাসাক্ষ্যাতেরওতো প্রয়োজন আছে, আর প্রভার জখন অমত নেই,…ওই কাজগুলো নিজেই করুক ও, বিয়ের পর সেইতো আমার মতন সংসার ঠেলতে হবে,” বুঝিয়েছিলো প্রভাবতীর মা, তার স্বামীকে ৷ সেই সুযোগে দেখা করেছিলো ওরা, পরিকল্পনা করেছিলো পালাবার, কয়েক দিনের প্রস্তুতি দরকারছিলো ওদের, অপরিনত পরিকল্পনা, দেখেফেলেছিলো কেউ, খবর চলেগিয়েছিলো দুটো পরিবারেই, ফলে প্রভাবতী আবার গৃহ বন্দিনী, ত্যাজ্য পুত্রের হুমকির সামনে সুরেশ, …তারপরেও পত্রবাহক বা বাহিকাদের ছুটি হয়নি, যেভাবেই হোক…বিয়ের দিনের দূবর্ল প্রহরার সুযোগে ওরা পালানোর পরিকল্পনা করলো, এবং ঐ দিন যেহেতু বিয়ে বাড়ীতে আমরাও অনেকেই উপস্থিত থাকবো, প্রভাবতীর বরিয়ে আসাতে সাহায্য করতে পারবো,…এমনি কিছু ভেবেছিলো ওরা,…মানুষ পরিকল্পনা করে আর উপরওয়ালা ভেস্তে দেয়,… কিছু সন্দেহ করেছিলেন কেবলবাবু, বিয়ের দিন সকালে তিনতলার ঘর থেকে বেরোতে পারলোনা সুরেশ, বাইরে থেকে তালা বন্ধ, অনেক ডাকাডাকি, অনুনয় বিনয়, তজর্ন গজর্ন, আস্ফালন, সবই বৃথা হলো, এদিকে সময় যায়, তিনতলার ঘরটা থেকে দেখাযায়…ঐ যে রানির পুকুর, আর একটু গেলেই ঢালি পাড়া…ঐ যে প্রভাদের বাড়ীর ছাদ,…কারা যেন আসছে…একদল,…গায়ে নতুন গামছা, নতুন শাড়ী, বৈশাখী রোদে সোনার মতন চক্ চক্ করছে গায়ে হলুদ মাখা…ঐতো প্রভাবতী…একবারকি মুখ তুললো? ওতো জানে কোথা থেকে এই জানলা দেখা যায়,…গোধূলি লগ্নের আর বেশী বাকিও নেই…বন্ধ খাঁচায় সিংহের মতন ঘুরতে লাগলো সুরেশ,…কার যেন পায়ের আওয়াজ, চুড়ির শব্দ মেশা..মা কি ? খুলবে দরজা ?... “তুমি এখানে কি করছো ?” ভারি গলায় ধমক,…বাবা…আবার সব চুপ, বেলা গড়িয়ে এলো, বৈশাখী দুপুর গড়িয়ে চলেছে গোধূলির দিকে, রানির পুকুরের ওপাশ থেকে উলুর আওয়াজ, বর এলো বোধহয়, মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে, কি করবে আর ভাবতে পারছেনা সুরেশ,…শাঁখের আওয়াজ, উলুধ্বনি, আনন্দকোলাহল,…হঠাৎ চোখ পড়লো দেওয়ালে, ডাকাতের ভয়ে সম্পত্তি রক্ষার জন্য রাইফেলটার দিকে…দিন রাত্রির সঙ্গম সময় এখন, পশ্চিম আকাশ লাল হয়ে গিয়েছে…
উলুধ্বনি ছাপিয়ে আর একটা আওয়াজ…শুনতে পেল ঢালি পাড়ার লোকেরা… “বন্দুকের আওয়াজ না ?”…খবর পৌছে গেল বিয়ে বাড়িতে পাঁচ মিনিটের ভেতর, পান দিয়ে মুখ ঢেকে প্রভাবতীকে তখন ঘোরানো হচ্ছে আর তিনবার বাকি, …আতঙ্কিত আলোচনা প্রভাবতীর কানে যেতেই জ্ঞান হারিয়ে পিঁড়ী থেকে পড়ে গেল,…অনেক পরে জ্ঞান ফিরলেও কোনোদিনই আর ফিরে আসলোনা প্রভাবতী বাস্তব পৃথিবীতে ৷

Share This!


No comments:

Post a Comment

Powered By Blogger · Designed By Seo Blogger Templates