রমনা -13
আজ রমনার অফিসিয়াল ডিভোর্স হয়ে গেল. শ্যামলী ওর জন্যে উকিল ঠিক করে দিয়েছিল. কিন্তু কোনো রকম বিবাদ ছাড়াই ব্যাপারটার সম্ভাব্য পরিনতি পেল. শত হলেও রমনার মনে একটু দুঃখ হলো. এত দিনের সম্বন্ধ একেবারে শেষ হয়ে গেল. আবার নতুন করে জীবন সংগ্রামের জন্যে তৈরী হতে হবে. ডিভোর্স মিটে যাবার পর আবার ওর গতানুগতিক জীবন শুরু হলো. বেশ কিছু দিন পর পরন্ত বিকেলে শ্যামলী তুয়া আর খোকাইকে নিয়ে বাইরে গেল. বোধ হয় কিছু কিনে টিনে দেবে!!! রমনার খোকাইকে দেবার মত কিছু নেই. যা দেবার সব শ্যামলিই দেয়. রমনা ঝিয়ের জীবন পেলেও খোকাই বেশ ভালই আছে. শ্যামলী ওকে বেশ যত্ন করে.... অন্তত ওর পিসি হয়ে যা করত এখনো তাই করে যায়. রমনাকে এই ব্যাপারটা খুব তৃপ্তি দেয়. খোকাই ভালোভাবেই মানুষ হচ্ছে. আগের স্কুল, আগের মত পোশাক, আগের মত বেড়াতে বেরোনো. শুধু ওর মায়ের পরিবর্তন, ওর ঠাম্মা আর বাবার অনুপস্থিতি. রমনারও খাবার কিছু খারাপ নয়. শ্যামলীরা যা খায় ও তাই খেতে পায়. শ্যামলী কখনো কম রান্না করতে বলে না. ওকে আগের দিনের খাবার খেতেও দেয় না. নাজিবুল সেই যে অতনুর খবর দিয়েছিল, তারপরে আর কোনো খবর পাওয়া যায় নি. না নাজিবুলকে জিজ্ঞাসা করবার সুযোগ পেয়েছে না শ্যামলীকে জিজ্ঞাসা করবার সাহস হয়েছে. তাই নাজিবুলের কথার ওপর ও ভরসা করেছে. ওর অপেক্ষায় আছে. কথা দিয়ে না রাখার মত ছেলে নয় অতনু. আর অপেক্ষা করা ছাড়া ওর কিছু করার উপায়ও ছিল না. কিন্তু সত্যি সত্যি একদিন যে অতনু ওকে নিতে আসবে সেটা ভাবতে পারে নি. যে দিন শ্যামলী বাচ্ছাদের নিয়ে বাইরে গেল সেদিন অতনু এলো শ্যামলীর বাড়িতে. বাড়িতে আর কেউ ছিল না. দরজার ঘন্টা শুনে রমনা দরজা খুলে দেখল যে অতনু দাঁড়িয়ে আছে দরজার বাইরে. রমনা স্থানু হয়ে গেল. বাইরে থেকে না স্পস্ট করে দেখা গেলেও ওর ভিতরে ঝড় বইছিল. আনন্দের ঝড়. অবশেষে অতনু এলো. আজ যে কি আনন্দ রমনা সেটা কাউকে বোঝাতে পারবে না. অতনু একদম ফিটফাট হয়ে এসেছে. ওকে দেখে রমনা জানতেও পারল না কখন ওর চোখ জোড়া জলে ভরে গেছে. দুজন নিস্পলকভাবে দুইজন পরস্পরের দিকে চেয়ে রইলো.
প্রথম অতনু কথা বলল. অতনু আবেগের সাথে বলল, "বাড়িতে ঢুকতে দেবে না?"
রমনা খেয়াল করলো তখন থেকে অতনু বাইরে আর ও দরজা ধরে দাঁড়িয়ে ছিল. দরজা থেকে একটু সরে দাঁড়িয়ে বলল, "এস, ঘরে এস."
অতনু বলল, "তোমার ঘরে চল."রমনা দরজা বন্ধ করে আর নিজেকে সামলাতে পারল না. অতনুকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলল. অতনু ওকে সামলাবার চেষ্টা করলো. মাথায় হাত বুলিয়ে দিল সান্ত্বনা দিল. কিছু সময় পর চুপ করে গেল. তারপরে রমনা জিজ্ঞাসা করলো, "এতদিন কোথায় ছিলে?"
অতনু বলল, "বসতে দাও আগে. সব বলব."
রমনা আবার বলল, "এদিকে কত কিছু হয়ে গেছে.... আর তুমি আমাকে ফেলে দিয়ে চলে গেলে...."
অতনু বলল, "আমি সব জানি. চল তোমার ঘরে."
হাত ধরাধরি করে ওরা রমনা ঘরে এলো. অতনু একটা চুমু এঁকে দিল ওর ঠোঁটে. অনেকদিন পরে অতনুর চুমু পেয়ে রমনাও ওকে প্রতিচুম্বন করলো. তারপরে ওরা বিছানায় বসলো. অতনুকে রমনা জিজ্ঞাসা করলো, "এত দিন কোথায় ছিলে? তোমাকে পাগলের মত খুঁজেছি আর তোমার আশায় দিন গুনছি."
অতনু বলল, "আমার খিদে পেয়েছে. তুমি খেতে দাও কিছু."
রমনা লজ্জা পেয়ে গেল. গৃহস্ত বাড়িতে কেউ এলে তাকে অবশ্যই কিছু খেতে দিত ও. অন্তত আগের শ্বশুরবাড়িতে. আজ অনেক দিন পরে অতনুকে পেয়ে সব ভুলে গেছে. তারাত্রায় উঠে দাঁড়িয়ে বলল, "এখনি আনছি. জিজ্ঞাসা করতেই ভুল হয়ে গেছে." বলেই রান্নাঘর দিকে ছুট দিল. দুপুরের খাবার যা ছিল তাতে অতনুর হয়ে যাবে. ও চটপট খাবারগুলো গরম করে নিয়ে এলো. রমনার ঘরে বসেই খেয়ে নিল. আসবাবপত্র বিশেষ কিছু নেই. তাই মেঝেতে বসে খেল. রমনা দুচোখ ভরে ওকে দেখতে লাগলো. ওকে খাইয়ে মনে মনে আনন্দ পেল. আগে খুব বেশি ওরা খাবার একসাথে বসে খায় নি বা রমনাও ওকে খাবার অফার করেনি. এসেছে, প্রয়োজন মিটিয়েছে, চলে গেছে.
ওর খাওয়া হয়ে গেলে রমনা বাসন নিয়ে চলে গেল. ওগুলো একটু গুছিয়ে রেখে আবার ফিরে এলো. দেখল অতনু ওর বিছানায় বালিশে ঠেস দিয়ে আধ শোয়া হয়ে আছে. রমনা এলো. ওর কাছে বসলো. অতনু ওকে টেনে বিছানায় তুলে দিল. নিজে সরে গিয়ে ওকে বালিশে ঠেস দিতে দিল আর নিজে ওর কোলে মাথা রেখে শুলো.
রমনা আগ্রহ নিয়ে ওকে বলল, "বল, অতনু তোমার কথা বল. কোথায় ছিলে এতদিন, কি করছিলে... সব বল."
অতনু বলল, "সব বলব আমার, কোথায় ছিলাম, কি করছিলাম. তার থেকেও বড় কথা আমি কে? তুমি আমার কিছুই জানো না. একটা গল্প বলছি সেটা থেকে তোমার সব উত্তর পেয়ে যাবে."
বেশ কয়েক বছর আগের কথা. সন্তু শহর থাকে. ওদের প্রাচীর দিয়ে ঘেরা একটা বড় বাড়ি আছে. বড়লোকের ছেলে. অভাব কিছু নেই. মা,বাবা, ঠাকুরদা, ঠাকুমা আর ছোট্ট একটা ভাই তার পরিবারে.বাড়িতে ঠাকুর, চাকর. গাড়ি. সব সে পেয়েছে. আর পেয়ে তার মা, বাবার গাইডেন্স. আর ঠাকুরদা, ঠাকুমার অফুরন্ত ভালবাসা. তার অভাব বলে কিছু নেই. জীবন আনন্দময়. কিছু এত কিছু থাকা বা পাওয়া সত্ত্বেও সে বড়লোকের বিগড়ে যাওয়া ছেলে নয়. অতি ভদ্র ব্যবহার. পরিমিত কথাবার্তা কিন্তু চটপটে. মাটিতে পা রেখে চলে মানে পয়সা আছে বলে কোনোদিন ধরাকে সরা জ্ঞান করে নি. করুনাময় ঈশ্বর এত কিছু দেবার পরেও ওকে দিয়েছেন মেধা আর সুসাস্থ্য. সুঠাম এবং সুন্দর চেহারা তার. প্রয়োজনীয় খেলাধুলা আর কঠোর পরিশ্রম দিয়ে জীবনের অনেক কীর্তি সে স্থাপন করতে পেরেছে. জয়েন্টে ভালো র্যাঙ্ক করে নামী ইউনিভার্সিটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে. হোস্টেলে থেকে পড়তে হয়. ছুটি পেলে বাড়ি চলে আসে. তো সেবার পরীক্ষা শেষ করে বাড়ি এলো. অনেক দিন ছুটি. সন্তুর মাসির বাড়ি গ্রামে. সন্তু বলল যে অনেক দিন মাসির বাড়ি যায় নি. তাই সে সেখানে বেড়াতে যেতে চায়. কয়েকদিন থেকে আবার চলে আসবে. মা, বাবা বা ঠাকুরদা ঠাকুমার আপত্তি কিছু ছিল না. আসলে সন্তুকে নিয়ে কোনো চিন্তা নেই. বাড়ির বড়দের বিশ্বাস সন্তু ভুল কিছু করে না. ও বিচক্ষণতা আর সততার ওপর বাড়ির সবার ভরসা আছে. তো গরমে সন্তু গেল ওর মাসির বাড়ি. মাসির বাড়ি মিকুনিগ্রামে. মাসির এক ছেলে, এক মেয়ে. ছেলের নাম সুজয়, ওর বয়সী. আর মেয়ে সুজাতা, ওর থেকে দুই বছরের ছোট. মেসো মাঠের কাজে তদারকি করেন. গ্রামে বাড়ি হলেও ওদের বেশ বর্ধিষ্ণু অবস্থা. অনেক সম্পত্তি. তাছাড়াও চাল কল, গম কল আছে. সুজয় সন্তুর বন্ধুর মত. কিন্তু সুজাতা একটা পাকা টাইপের মেয়ে. বেশ পাকা পাকা কথা বলে. কিন্তু বেশ ভালো. সন্তুর খোলামেলা লোক জন বেশি ভালো লাগে. গরমকালে মিকুনির গ্রামের নদীতে স্নান ওর খুব প্রিয়. আগেও যখন গরমের সময় এসেছে তখন নদীতে স্নান করেছে. সুজয়রা ওটাকে নদী বলে না. বলে গঙ্গা. আসলে ওটা ভাগীরথী. সেটা যে নদি ওদের কোথায় বোঝা যায় না. স্নান করতে যাবার আগে বলে, "চল সন্তু গঙ্গায় যাই, স্নান করি আসি." অথবা বলবে চল গঙ্গার পারে একটু হেঁটে আসি. মাসি হয়ত বলল, গঙ্গার পারের জমিতে তরমুজ হয়েছে আসার সময় নিয়ে আসিস. এমনকি গ্রামের কেউ কখনো বলেনা নদীতে যাব. সবাই গঙ্গায় যায়. সন্তুর বেশ ভালো লাগে গ্রামের পরিবেশ. বিশেষ করে লোকজন. সবাই সবাইকে চেনে. আর যেহেতু সন্তু সুজয়দের অতিথি, তাই ও যেন গোটা গ্রামেরই অতিথি. অনেকেই সুজয়কে জিজ্ঞাসা করে, "এটা তোর সেই ইঞ্জিনিয়ার ভাই না?" সুজয় হ্যা বলেতই সরাসরি সন্তুর সাথে কথা বলা শুরু করে দিত. কেমন আছ? পড়াশুনা কেমন চলছে? চাকরি পেয়ে গেছ কিনা এইসব. সুজয়রা ওদের গ্রামে ওদের বিষয় সম্পত্তির জন্যে বেশ সম্মান পায়. আর সন্তু পড়াশুনায়, ব্যবহারে ভালো হবার জন্যে বেশ খাতির পায়. গরমের সময় কোনো বাড়ি গেলে ওদের নির্ঘাত গাছ পাকা আম খেতেই হত. কেউ কেউ আবার আমের সাথে মুড়ি দিত. আর দিত দুধ. আম, দুধ মুড়ি. সন্তুর বেশ লাগত. বিকেলে গ্রামের অনেকেই স্কুলের মাঠে থাকত. মাঠটা বেশ বড়. একদিকে নদী বা গঙ্গা বয়ে গেছে আর অন্যদিকে পড়ন্ত বিকেলের সোনালী আলোয় ধোয়া মাঠ. যারা মাঠে কাজে যেত, তারা ফিরে এসে গঙ্গায় স্নান করে মাঠে বসত. বাচ্চারা তাদের খেলা নিয়ে ব্যস্ত. তাই নিয়ে চিল্লামিল্লি. পাশে হয়ত কিছু বয়স্ক মানুষ তাস খেলছেন. ছেলেরা ফুটবল খেলছে বা কিছু ছেলে মাঠের পাশে বসে আড্ডা মারছে. আর মেয়েরাও আস্ত সেই মাঠে. নিজের নিয়ে ব্যস্ত থাকত. নিজেদের কথা, হাসাহাসি এই সব চলত. শুধু বাড়ির গৃহিনীরা আসতে পারতেন না. হয়ত বা অল্প সময়ের জন্যে এসে কাউকে খুঁজে নিয়ে যেতেন বা একটু সময় কাটিয়ে যেতেন. সন্তুর এই বিকেল খুব ভালো লাগে. যেন সব দিনই মেলা বসে এই সময়ে. ও ফুটবল খেলত সুজয়দের সাথে. বেশ মজা করে দিন কেটে যেত. একদিন খেলে যখন ঘাম শরীরে বাড়ি ফিরছিল তখন দেখল যে সুজাতা একটা মেয়ের সাথে আসছে. খেলার মাঠের দিকে. তখন বিকেল শেষ. সন্ধ্যা হবার আগে. বিকেলের সোনা রোদে দেখল মেয়েটিকে. দেখেই ভালো লেগে গেল ওর. বেশ লম্বা, চিপচিপে চেহরা. মুখে লজ্জা জড়ানো হাসি. সুজয় সাথে ছিল. তাই কিছু বলার ছিল না. শুধু সুজাতার পিছনে পড়ল, "শুধু ধেই ধেই করে নাচলেই হবে? বাড়ি ফিরবি না?"
সুজাতা বলল, "ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে ফিরব বাড়ি. তোমরা যাও."
ওদের পাত্তা না দিয়ে ওরা এগিয়ে গেল.
সেই শুরু. তারপর সন্তু ওই মেয়েটিকে অনেকবার দেখেছে. স্নান করতে গিয়ে গঙ্গার ঘটে. বিকেলে স্কুলের মাঠে. সুজাতা কখনো ওর সাথে থাকত, কখনো ও অন্য কারুর সাথে থাকত. সন্তু জেনেছিল ওর নাম রান্তা. ওই পাড়ার মুখার্জি কাকার একমাত্র মেয়ে. সুজাতার সাথেই ও পড়ত. দিনে দিনে সন্তু আরও বেশি করে রান্তার প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকলো. নিজের মনের কথা ও সুজয় বা সুজাতা কাউকেই বলতে পারেনি. নিজের কল্পনাতে রান্তাকে ভালোবেসে গেছে. গ্রীষ্মের ছুটি শেষ হয়ে এলেও ওর বাড়ি বা হোস্টেল ফিরে যেতে ইচ্ছা করে না. রান্তাকে দেখতে পেলেই যেন ওর জীবন চলে যাবে. দিনের শেষ রান্তার এক ঝলক পাবার আশায় ছুটির শেষ দিন পর্যন্ত থেকে গেল মাসির বাড়ি. সুজাতা লক্ষ্য করেছিল যে ওর সন্তু দাদা ওর বান্ধবীর প্রেমে পড়ে গেছে. যাই হোক ছুটি শেষ হলে সন্তুকে নিজের বাড়ি, তারপর হোস্টেলে ফিরে যেতে হলো. কিন্তু মন পড়ে রইলো মিকুনিতে রান্তার জন্যে.
সুজাতা নিজের দায়িত্বে রান্তার মনের খবর নিয়েছিল. রান্তার কোনো কারণ ছিল না যাতে সন্তুকে ওর ভালো লাগবে না. বড় ঘরের ছেলে, ভদ্র, মার্জিত, বুদ্ধিমান, সুদর্শন. একজন পুরুষের কাছে মেয়েরা যা যা চেয়ে থাকে তার সবই ছিল, বরঞ্চ সন্তুর যেন তার থেকেও বেশি কিছু ছিল. একটা ভাল মন. নিজেকে সবার থেকে আলাদা না করার চেষ্টা. আর ওই রকম ছেলে যদি রান্তার দিকে চায়, ওর দিকে তাকিয়ে থাকে তাহলে তার মানে বুঝতে দেরী হয় না. রান্তা নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করবে যদি সন্তুর সান্নিধ্য পেতে পারে. তাই সুজাতা যখন সন্তুর কথা ওর কাছে তুলল, তখন ওর প্রিয় বান্ধবীকে বলল অনেক কথা. যার থেকে স্পষ্ট যে রান্তাও সন্তুকে মনে মনে কামনা করে. আর কি দুইয়ে দুইয়ে চার হওয়া বাকি.
মাস খানেক যেতে না যেতেই সন্তু আবার মাসির বাড়ি গেল. একটা উইক এন্ডে ছুটি পড়ল... তাতে টানা ৩-৪ দিন. ওর মধ্যে নিজেকে আর হোস্টেল বা বাড়িতে আটকে রাখতে পারল না. বাড়ির সবাই বুঝলো কিছু একটা হয়েছে. হয়ত সন্তু প্রেমে পড়েছে. কারণ ও মাসির বাড়ি থেকে ফিরে আসার পর থেকেই কেমন একটু চেঞ্জ হয়ে গেছে. একটু চুপচাপ. নিজের মধ্যেই থাকে. ফলে যে ছেলে দুই বছর পর মাসির যাবার পর আবার এক মাসের মধ্যেই দ্বিতীয়বার যেতে চায় তার প্রেমে পরা ছাড়া আর কি হতে পারে. ওর ওপর ভরসা আছে. তাই ওকে কোনো কাজে কেউ আটকায় না. তাই এবারও আটকানো হলো না বা কোনো প্রশ্ন করা হলো না. সন্তু যেতেই সুজাতা বুঝলো যে সন্তু দাদা এত তাড়াতাড়ি কেন এসেছে. সন্তু সুজাতাকে বলল সব কথা. এবং অনুরোধ করলো যেন রান্তার সাথে ওর দেখা করিয়ে দেয়. গ্রামের মধ্যে ঐভাবে দুইজন সোমত্ত মেয়ের সাথে কোনো ছেলে একা একা দেখা করতে পারে না. পারে না মানে পারে. কিন্তু সে বড়ই কঠিন কাজ. যদি কেউ দেখে ফেলে তাহলে তার হয়ে গেল. বিশেষ করে মেয়েটির. নানা লোকে নানা কথা বলতে শুরু করবে. কয়েক মুহুর্তেই গ্রামের সবাই জেনে যাবে.
সেদিন বিকেলে সুজাতা গঙ্গার পারে হাটতে যাবে রান্তার সাথে. তখন সন্তু ওর সাথে কথা বলতে পারবে. কিন্তু সুজাতা থাকবে. একলা একলা হবে না. এই রকম পরিকল্পনা করা হলো. এবং তার বাস্তব রুপায়ন হলো. সন্তু বলল, "কিভাবে শুরু করব বুঝতে পারছি না. সুজাতা তোমাকে আমার কথা বলেছে. আমি তোমাকে খুব পছন্দ করি. তোমার উত্তরের ওপর অনেক কিছু অপেক্ষা করছে."
মাঝে থেকে সুজাতা বলল, "আমি কিছু কিন্তু বলিনি."
রান্তা সহজভাবে বলল, "তোমার যা যা গুন আছে বা তুমি যেরকম তাতে তুমি যে কোনো মেয়ে পেতে পারো. আমার প্রশ্ন আমাকে কেন? মানে আমার কি দেখে তোমার পছন্দ হলো?"
এত বড় কঠিন প্রশ্ন. ওর সব ভালো লাগে. বিশেষ কিছু না. টোটাল প্যাকেজ. সন্তু বলল, "তোমার সব ভালো লাগে. আমি তোমার জন্যে চাঁদ, তারা এনে দেব বা জগতে সব থেকে সুখী করে রাখব, এই ধরনের কোনো কথা বলতে পারব না. আমার সাথে মিশলে আমায় চিনবে. আশা করি খারাপ লাগবে না." রান্তা ওর উত্তর শুনে খুব সন্তুষ্ট হলো না.
রান্তা বলল, "আমার আর একটা কথা আছে. যদি তোমার সাথে সম্পর্ক তৈরী করতে রাজি হই তাহলে আমাকে কোনদিনও ছেড়ে দেবে না তো?"
সন্তু বলল, "দেখো এইসময় এই প্রশ্নের উত্তর কখনো না হয় না. কিন্তু পরে কি হবে সেটা পরে ঠিক করাই ভালো. এইটুকু শুধু বলতে পারি যে আমার ওপর ভরসা করতে পারো আর ভবিষ্যতে যা করব দুইজনে মিলে করব. একা একা কোনো সিদ্ধান্ত নেব না."
রান্তা বলল, "আমার আর একটা কথা আছে?"
সন্তু বলল, "আবার কি?"
রান্তা লজ্জা জড়ানো মুখে বলল, "তোমাকেও আমার খুব পছন্দ."
ব্যাস সন্তুকে আর পায় কে. গোটা দুনিয়া ওর কাছে. সব থেকে সুখী মানুষ. জীবনের সব থেকে আনন্দের দিন. প্রথম প্রেম. প্রথম প্রেম সেটা আবার সফল. খুব কম ভাগ্যবান ছেলের কপালে এটা জোটে. কিশোরী বয়সী মেয়েদের খুব দেমাক থাকে. রূপসী হলে তারা তো মাটি হাঁটে না. বাতাসে ভেসে বেড়ায়. তাই কোনো ছেলে প্রেমের প্রস্তাব দিলে কোনো ভাবার আগেই না বলে দেয়. অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে তবে তার মন পাওয়া যায়. সন্তু হয়ত নিজেকে খুব ভালো করে চেনে না. তাই ওর যে গুন, রূপ আছে তার ওপর ভরসা করতে পারে নি.
এরপর সন্তু আবার মিকুনিতে এলো পুজোর ছুটিতে. মাকে সব বলেছে. মাকে সব বলে. তাই রান্তার কথা বলতে কোনো দ্বিধা করে নি. ছেলের পছন্দ মায়ের পছন্দ. মাঝে হোস্টেলের ঠিকানায় রান্তা চিঠি দিত. আর সন্তু চিঠি দিত সুজাতাকে. সেটা সুজাতা সঠিক ঠিকানায় পৌছে দিত. এইভাবে ওদের যোগাযোগ হত. পুজোতে এবার সন্তুর সব থেকে বেশি আনন্দ. তার রান্তা আছে. পুজোতে ওর জন্যে জামা কাপড় আনতে পারে নি. এত বড় আকারের উপহার দেওয়া যায় না. জামা কাপড় দিলেই অনেকের অনেক প্রশ্ন জাগতে পারে. কোথায় কিনলি, কে দিল ইত্যাদি. ওর জন্যে তার পরিবর্তে এনেছে এটা সোনার চেইন. যেটা ওর গলায় থাকবে আর সব সময় সন্তুর কথা মনে পরিয়ে দেবে. সব সময় চেইন নয়, সন্তুই থাকবে ওর সাথে. ওর বুকের মাঝে. পুজোর দিনগুলো সবার জন্যে সত্যি খুব আনন্দের, রঙিন. রান্তা আর সুজাতা এসেছে চঞ্চলদের আম বাগানে. অষ্টমী পুজোর সন্ধ্যা. সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত. আগের পরিকল্পনা মাফিক ওরা দেখা করলো. নতুন জামা কাপড়. উত্সবের রোশনাই, শব্দের কোলাহল থেকে একটু দূরে, একটু নির্জনে. জায়গাটা একটু আবছা মত.
সুজাতা বলল, "বেশি সময় পাবে না. আমি এই পিছন ফিরে তাকালাম. তাড়াতাড়ি প্রেম শেষ কর. আমরা আবার ফিরে যাবে. কেউ জানতে পারলে কেলেঙ্কারী হয়ে যাবে."
সন্তু বলল, "তুই থাম তো. একেই দেখা পাই তো কথা হয় না.... তার মধ্যে আবার তাড়া দিচ্ছে."
রান্তা বলল, "ও ঠিকই বলেছে. তাড়াতাড়ি চলে যেতে হবে."
সন্তু ওর পাঞ্জাবির পকেট থেকে চেইনটা বের করলো. ওকে পরিয়ে দিল. ওকে একটু জড়িয়ে ধরল. মুখটা নামিয়ে একটা চুমু দিল ওর ঠোঁটে. সন্তুর প্রথম চুম্বন. রান্তার প্রথম চুম্বন. কি অসাধারণ অনুভূতি!! নিজের প্রেমিকার প্রথম চুম্বন ওর কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকলো. রান্তা বুঝে ওঠার আগেই চুমুটা দিয়ে ফেলল. লজ্জা পেয়ে সন্তুকে সরিয়ে দিল. সন্তু বলল, "এই হারটা তোমাকে দিলাম. আমি হার হয়ে তোমার সাথে থাকব. এই পরিয়ে দিলাম, আর কোনো দিন এটা খুলো না. আমাকে আলাদা কর না."
রান্তা ওকে জড়িয়ে ধরল. নিজেকে ওর সাথে মিশিয়ে দেবার ইচ্ছা.
সুজাতা তাড়া দিল, "রান্তা চল্."
রান্তা সন্তুকে বলল, "এই দিনটা জীবনে ভুলব না."
সন্তু বলল, "আমিও."
ওরা চলে গেল.
এরপরে ওর সাথে সন্তদের শহরে দেখা হয়েছিল. সুজাতার কি একটা কাজ ছিল, তাই রান্তাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল. সুজাতা সন্তুকে হোস্টেলে ফোনে করে জানিয়ে দিয়েছিল. আসলে যাতে ওদের দেখা হয় সেই জন্যেই রান্তার বাবার সাথে কথা বলে, রাজি করিয়ে এনেছিল. সন্তুদের শহরে যে বিখ্যাত পার্ক ছিল, 'নেতাজি পার্ক' সেখানে দেখা করবার বন্দোবস্ত হয়েছিল. রান্তা ভাবতেই পারেনি যে সন্তু ওর মাকে সাথে করে নিয়ে আসবে. আর এসেছিল ওর ছোট ভাই. নাম বলেছিল, 'অন্তু'. খুব দুষ্টু ছিল. কিন্তু রান্তার খুব পছন্দ হয়েছিল. সন্তুর মাকে দেখে নিজের না থাকা মায়ের অভাব বোধ করছিল. ওর মা থাকলে হয়ত ওনার মতই হত. আলাদা করে রান্তাকে সন্তু মা বলেছিলেন, "রান্তাকে যদি বউ করে ঘরে আনতে পারি সেটা আমার বড় সৌভাগ্য হবে. দেখো বাড়ির সবাই তোমাকে খুব পছন্দ করবে."
কিন্তু সেই সৌভাগ্য হলো না. রান্তার বাবা ওর বিয়ে অন্য জায়গাতে ঠিক করেছেন. সব জানার পরে সন্তু ওর মাকে জানিয়েছিল. কিন্তু কোনো লাভ হয়নি. সন্তুর মা বাবা রান্তার বাবার সাথে কথা বলেছিলেন. সন্তুর তখন ফাইন্যাল ইয়ার. চাকরি ক্যাম্পাসিং-এ পেয়ে গেছে. পরীক্ষা তারপর ফল বেরোবে. তারপরে ও জয়েন করবে. মাঝে মোটে কয়েকটা দিন. কিন্তু রান্তার বা গো ধরে থাকলেন অব্রাহ্মন ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দেবেন না. সব চেষ্টা বিফল হয়ে যাবার পর সন্তু আবার রান্তার সাথে দেখা করতে পারল. ওই মিকুনিতে গিয়েই. রান্তার ইচ্ছা ছিল পালিয়ে যাবার. কিন্তু সন্তু সেটা চায় নি. বলেছিল যে বিয়ে না হলেও ওদের ভালবাসা অমর হয়ে থাকবে. ওদের মন থেকে কেউ কোনদিন ওদের ভালবাসা মুছে দিতে পারবে না. ওরা পালিয়ে গেলে রান্তার বাবার অসম্মান হবে. ওনার বিশ্বাসে চির ধরবে. তাই সন্তু কিছুতেই রাজি নয়. পালিয়ে গেলে সন্তু দিক থেকে কোনো অসুবিধা নেই. ওরা সন্তুর বাড়িতেই বিয়ে করে উঠতে পারে. সন্তুর বাড়ির কোনো আপত্তি নেই. কিন্তু তাতে ওদের অসম্মান হবে. রান্তা অনেক কেঁদেছিল. কিন্তু সন্তু শোনে নি রান্তার কান্না. রান্তা বলেছিল, মানুষ তার চিহ্ন রেখে যায় তাদের সন্তানের মধ্যে দিয়ে. আমাদের ভালবাসার কি চিহ্ন হবে? সন্তু বলেছিল যে রান্তার গলায় সন্তুর দেওয়া হারটা হবে ভালবাসার প্রতিক. রান্তা একটা আবদার করেছিল সন্তুর কাছে. ওকে একটা সন্তান দিতে. যেটা শুধু সন্তু আর রান্তার হবে. ওটাই হবে ওদের ভালবাসার জীবন্ত নিশান. সন্তু রান্তাকে কথা দিয়েছিল যে ওকে একটা সন্তান দেবে. কিছুদিন বাদে সন্তুর শহরেই রান্তার বিয়ে হয়ে গেল৷ ছেলের সোনার দোকান আছে৷ নাম সুবোধ চক্রবর্তী৷
রমনা এই পর্যন্ত শোনার পরে অতনুকে বলল, "আমি জানি খোকাইয়ের জন্ম বৃত্তান্ত. তুমি নতুন কিছু শোনাও. আমি আজও জানি না সন্তু বা শান্তনু কি করছে? কোথায় আছে? ও শুধু ভালবাসার চিহ্ন দিয়ে চলে গেল. আর কোনো দিন দেখা হয় নি আমার সাথে. তুমি কে? প্লিজ, বোলো না যে তুমি অন্তু? প্লিজ!!"
চলবে.......
রেশমী ভাবী
ReplyDeleteলজ্জার মাথা খেয়ে ছোটমামা
যুবতীর কাহিনী
কামিনীমামী
চুদাচুদি গল্প