Thursday, August 16, 2012

রমনা (সংগৃহীত)-14



রমনা  -14

অতনু বলল, "আমার ডাক নাম অন্তু. সন্তু বা শান্তনুর ভাই. যখন আমাকে প্রথম দেখেছিলে তখন আমি বছর দশেকের বালক ছিলাম."
রমনা অবাক হলো আবার আগ্রহর সাথে জিজ্ঞাসা করলো, "সন্তু কোথায়? ওর সাথে আমার অনেক দিন কোনো দেখা নেই. কোনো খবর জানি না. আমি সুজাতাকেও অনেক জিজ্ঞাসা করেছি. ওরাও কিছু জানে না. একেবারে ভ্যানিশ হয়ে গেছে. তুমি বল সন্তুর কথা?"
অতনু বলল, "দাদা আর বেঁচে নেই. মারা গেছে."
দুঃখে রমনার বুক ভেঙ্গে গেল. প্রথম ভালবাসা আর নেই. ওদের ভালবাসার নিশান আছে. খোকাই. জীবন কি অদ্ভুত একটা পরিস্থিতিতে এনে দাঁড় করলো ওকে. অতনু যে ওর জীবন ওলট পালট করে দিয়েছে, যে এখন ওর ভরসা আর ভালবাসার পাত্র সেই দিচ্ছে ওর জীবনে আসা প্রথম পুরুষের মৃত্যু সংবাদ. একই সাথে এক পরম আত্মীয়র বিদায় এবং অন্য এক পরম বন্ধুর প্রবেশ. দুটো ঘটনাই নাড়া দেবার জন্যে যথেস্ট. যে ছোট্ট অন্তুকে প্রথম দেখেছিল ওর মা দাদার সাথে সেই যে অতনু তাতেই কেমন একটা ফিলিং হচ্ছে. সেদিনের কথা মনের মধ্যে ভেসে উঠলে ও লজ্জা পেল. তখন ও পূর্ণ যুবতী. আর অতনু নেহাতই বালক. অথচ সেই ছোট্ট ছেলেটি ওর জীবন একেবারে অন্য খাতে এনে ফেলল. দুঃখ সামলে রমনা আবার অতনুকে জিজ্ঞাসা করলো, "কি হয়েছিল?"
অতনু বলল, " এডস হয়েছিল?"
রমনার অবাক হবার পালা মনে হয় অতনু শেষ হতে দেবে না. প্রথম থেকে ওকে অবাক করে এসেছে, এখনো করে চলেছে.
রমনা আশ্চর্য্য হয়ে বলল, "এডস?"
অতনু বলল, "হ্যাঁ, এডস?"
রমনা বলল, "কি ভাবে হয়েছিল এডস?" ওর ধারণা যে সন্তু কোনো বাজে কাজ করতে পারে না. এডস এমন একটা রোগ যা শুনলে যে কারোর ভ্রু কুঁচকাবে. মনে মনে একটা ঘেন্না. শালা দুঃশ্চরিত্র কোথাকার. বেশ হয়েছে. মর গে যা. অবাধ চোদাচুদি ছাড়াও যে এডস হয়ে পারে সেটা রমনার অজানা নয়. তার বিশ্বাস সন্তুর এটা বাদ দিয়ে অন্য কোনো ভাবে এডস হয়েছিল.
অতনু বলল, "বৌদির এডস ছিল. দাদার সাথে বিয়ে হবার আগে সে বেশ্যা ছিল. পেশার সূত্রে বৌদি এডস পেয়েছিল."
রমনার সব গুলিয়ে গেল. সন্তুর এডস ওর বৌয়ের কাছে থেকে পাওয়া!!! ও বিয়ে করলো আর রমনা জানতে পারল না!! অন্তত সুজাতা তো ওকে বলতোই.
রমনা বলল, "আমাকে সব গুছিয়ে বল কি ভাবে কি হয়েছিল? সব ডিটেইলসে."
অতনু বলতে শুরু করলো, "তুমি দাদার কাছে থেকে একটা সন্তান চেয়েছিলে. দাদা সেটা দেবেও বলেছিল. তার আগের কিছু ঘটনা বলি. আমরা অনেক পয়সাওয়ালা লোক ছিলাম. ঠাকুরদার ব্যবসা বাবা অনেক বাড়িয়েছিলেন. এগুলোর মধ্যে অন্তত দুটো তুমি চেন, অন্তত নামে চেন. অলকা রেস্টুরেন্ট আর সন্তুর গ্যারাজ. তার মধ্যে একটা দিক ছিল সোনার গয়নার দোকান. সেখানে অনেক কর্মচারী ছিল. সব থেকে বিশ্বস্ত ছিল জগৎবাবু বলে একজন. অসাধারণ গয়না বানাতেন. কিন্তু ওনার ছেলের গয়নার কাজ শেখার ধৈর্য্য ছিল না. সে হতে চায় দোকানের মালিক. বাবা জগৎ বাবুর ছেলেকে দোকানের কাজ দিয়েছিলেন. ওই ম্যানেজার মত ছিল. বাবা সব করতেন. আর জগৎবাবুর ছেলেকে ব্যবসার কাজ শেখাতেন. সোনা কেনা, গয়না বিক্রি করা, কি দামে বিক্রি করলে কতটা লাভ থাকে, কিরকম লাভ করা উচিত....এইসব. আস্তে আস্তে সে অনেক কিছু জানলো. একদিন সে মনে করলো যে অনেক শিখে গেছে. নিজেই সে ব্যবসা চালাতে পারবে. কিন্তু সে দোকানের কর্মচারী মাত্র. তার ওপর আমার বাবার নজরদারি থাকত. ধীরে ধীরে কমে গেছিল. ওর ওপর বিশ্বাস জন্মেছিল. কম হলেও থাকত. সেটা ওর সহ্য হয় না. তাই প্ল্যান করতে শুরু করলো কিভাবে দোকানটা একান্তভাবেই ওর হবে. সেবারে বাবা মা দার্জিলিং বেড়াতে গিয়েছিলেন কয়েক দিনের জন্যে. আমি দার্জিলিং-এ স্কুলে পড়তাম. আমাকে দার্জিলিং স্কুলে ভর্তি করে কেন দিয়েছিল সেটা তখন ভালো করে জানতাম না. তখন অনেক কান্না করতাম. কিন্তু বাবা সেসব না শুনে আমাকে ওখানেই ভর্তি করে দিয়েছ্লেন. পরে দাদা বলেছিল যে বাবা ওখানের ছাত্র ছিলেন, বাবার ওখানে এত ভালো লেগেছিল যে ওনার প্রবল ইচ্ছা ছিল দুই ছেলেই ওখানে পড়ুক. কিন্তু দাদাকে মা কোনো মতেই পাঠাতে দেন. কিন্তু আমার বেলায় বাবা কিছু শোনেন নি. যাই হোক, ওদের উদ্দেশ্য ছিল আমার সাথে দেখা হবে আর একটু বেড়ানোও হবে. মায়ের জন্যে বেশি করে যেতে হয়েছিল বাবাকে. তখন বেশি দিন আমি ভর্তি হই নি. দাদা ছিল হোস্টেলে. ওদের নিয়ে দার্জিলিং গিয়েছিল জগৎ বাবুর ছেলে আর আমাদের ড্রাইভার নিতাই. এক রকম জোর করে নিয়ে গিয়েছিল. আমার সাথে দেখা করে দুইচার দিন কাটিয়ে ওদের ফেরার কথা ছিল. কিন্তু মা বাবা আর জীবন্ত ফেরে আসেন নি. গাড়ি খাদের নিচে পরে গিয়ে ওরা মারা গিয়েছেলেন. নিতাই ফিরেছিল জখম হয়ে. হাসপাতালে ওকে অনেক দিন কাটাতে হয়েছিল. জগৎবাবুর ছেলে ফিরেছিল ট্রেইনে করে. ওই ঘটনার পর আমি কলকাতায় আবার ফিরে এলাম. তখন বেশি বিষয় সম্পত্তি নিয়ে ভাবতে হত না. ভাবতামও না. শুনলাম যে, যে সোনার দোকানে জগৎবাবুর ছেলে কাজ করত সেটা নাকি ওর হয়ে গেছে. ফেরার আগে বাবা নাকি ওটা সুবোধ চক্রবর্তীর নামে লিখে দিয়ে গেছেন. তখন তোমার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল সুবোধের সাথে. ঠাকুরদা আর দাদা পরিস্কার করে বুঝতে পারল যে ওই দুর্ঘটনা ঘটানো হয়েছে আর সেটা কেন ঘটানো হয়েছে তার কারণও. কিন্তু হাতে সেইরকম কিছু প্রমান নেই. তাছাড়া দাদা সুবোধের নামে মামলা করতে কিছুতেই রাজি হয় নি. তোমার যে সুবোধের সাথে বিয়ে হয়েছে সেটাই ছিল প্রধান কারণ. তুমি হয়ত আর্থিক দুরাবস্থা পড়বে বা স্বামী ছাড়া থাকবে সেই সব কথা ভেবেই. আমার কি মনে হয় জানো দাদা পড়াশুনায় যতই ভালো হোক, যতই ভালো মানুষ হোক... ও হয়ত খুব ভিতু ছিল. নাহলে তোমাকে ওর বিয়ে না করার কোনো কারণ আমি খুঁজে পাই না. তুমি রাজি যেখানে তোমার বাপের বাড়ি ছাড়তে রাজি, আমার বাড়ি থেকে কোনো আপত্তি নেই, তারপরও কেন যে তোমায় বিয়ে করলো না!!!! তোমাদের বিয়ে হলে জীবন কত অন্যরকম হত."

রমনা বলল, "অতনু তুমি ওকে বুঝবে না. ও নিজের কথা বা শুধু নিজেদের কথা ভাবত. তার বাইরে গিয়ে ভাবত. যে কাজটা করলে কেউ যদি প্রবলভাবে আঘাত পায় সে কাজ ও কোনো দিন করবে না."
অতনু বলল, "ওর সাথে যে তোমার বিয়ে হলো না তাতে তুমি আঘাত পাও নি? আর সেটা কত বড় সেটা তো আর কাউকে বলে দিতে হবে না."
রমনা বলল, "আমার থেকেও ও আমার বাবার কথা ভেবেছিল আগে. ওর সাথে আমার ভালবাসা কয়েক দিনের, কয়েকটা বছরের আর বাবার সাথে সেই জন্ম থেকে. মা মারা যাবার পর থেকে আমার বাবাই আমার সব ছিল. সে যতই গোঁড়া হোক, তবুও তো বাবা. আমিও এভাবে ভাবতাম না. সন্তুই আমাকে বুঝিয়ে ছিল. ওকে ভিতু বল না. তারপরে কি হলো বল."
অতনুও বলতে শুরু করলো, "ঠাকুর্দাও বাবা মায়ের শোকে শরীর খারাপ করে ফেলেছিলেন. ব্যবসায় বুদ্ধি খাটানোর মত অবস্থায় ছিলেন না. একেবারে বিছানায় পড়ে গেলেন. ঠাকুরমা কোনো মতে সংসার চালাতে লাগলেন.
দাদা ওই অবস্থাতেও পড়া চালিয়ে গেল. তোমাকে দেওয়া কথা তাকে পূরণ করতে হবে. সেটা ওর মাথায় আছে. সেই মত তোমার বাড়ি গিয়েও ছিল. তোমরা বোধ হয় ফোন করেই সময় ঠিক করেছিল. কপাল দাদার এমন খারাপ যে তোমার সাথে ওর ভালবাসা শেয়ার করার সময় সুবোধ তোমাদের দেখে ফেলে. তোমরা নিজেতে এমন মগ্ন ছিলে যে টেরটিও পেলে না কি সর্বনাশ ঘটে গেল. তোমাদের ঘটনা কেউ জানলো না সুবোধ ছাড়া. তুমি ভেবে ছিলে তোমাকে আর আমাকে সুবোধ প্রথম দেখেছিল. না. ওটা ওর দ্বিতীয়বার. প্রথমবার দেখে ও রাগে অন্ধ হয়ে গেল. কিন্তু কাউকে কিছু বুঝতে দিল না. বাবা মার ব্যাপারে যেমন নিঃশব্দে প্ল্যান কষেছিল, এবারে তাই. বেশি লোক জড়ালে ওর সম্মান নষ্ট হতে পারে. দাদা যে ইউনিভার্সিটিতে পড়ত সেখানে গেল সুবোধ আর নিতাই. ওর সাথে দরকারী কথা আছে বলে এপয়েন্টমেন্ট নিল. দাদার চরিত্রের বড় দোষ সবাইকে চট করে বিশ্বাস করে. সুবোধের নামে বাবা মা খুনের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও দেখা করতে রাজি হলো. কেন রাজি হয়েছিল আমাকে কোনো দিন স্পষ্ট করে জানায় নি. হয়ত ও তোমার বর ছিল সেই জন্যেই. কলকাতাতে দাদার ইউনিভার্সিটি ছিল শহরের দক্ষিন প্রান্তে. আর দাদাকে দেখা করে জরুরি কথা বলার জন্যে জায়গা ঠিক করলো শহরে বাইরে দক্ষিন প্রান্তে. ফলে দাদার যেতে কোনো অসুবিধা হলো না. কিন্তু গিয়ে যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হলো তা সে কল্পনাতেও আনতে পারে নি. ওকে বন্দী করে রাখল একটা ঘরে. এবং সেখানে ওর সাথে জোর জবরদস্তি একটা একজন যৌনকর্মীর সাথে সেক্স করানো হলো. দাদা জানতে পারে যে ওর এডস আছে. সেটা জানার পরেই সুবোধ ওই মেয়েটির সাথে দাদার সেক্স করে কোনো রকম প্রটেকশন ছাড়াই. দাদার এডস হওয়া নিশ্চিন্ত করতে আরও কয়েকবার জোর করে ওই কাজটি করানো হয়. কেন দাদাকে এইরকম করতে হলো সেগুলো সুবোধ সব বলেছিল. এটা যে ওর শাস্তি তাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল. তুমি ভাগ্যবান যে দাদার সাথে তোমার প্রথম এবং শেষ মিলনের ফলে খোকাই জন্মেছে. সেবার না হলেও দাদা আর কোনো দিন তোমার কাছে আসতে পারত না."
সব শোনার পর থেকে রমনা ভেউ ভেউ করে কাঁদতে শুরু করে দিল. সন্তুর ভালবাসা জীবনে পেল না. আর রান্তাকে ভালবাসার জন্যে জীবনটাই শেষ হয়ে গেল সন্তুর. অতনু রমনাকে সান্তনা দেবার চেষ্টা করলো. কি বা সান্তনা দেবে. নিজের বুকের কষ্টই চেপে রাখা যায় না.
বেশ খানিক পড়ে রমনা শান্ত হলে বলল, "তুমি এতদিন কোথায় ছিলে?"

অতনু বলল, "অনেক কাজ ছিল সেগুলো মেটালাম. দাদা ওই মেয়েটিকে বিয়ে করেছিল. বৌদির নাম ছিল সুপ্রীতি. যখন দাদাকে ছেড়ে সুবোধরা চলে গেল তখন দাদা ওখানে ছিল. ঘটনার অকিস্মিকতায় ও বিহ্বল. ওর এডস হয়েছে জেনে ভেঙ্গে পড়ল না. এখানেই বোধ দাদার সাথে আর পাঁচ জনের পার্থক্য. হোস্টেলে ফিরে গেল. আমি এখানে স্কুলে পড়ছিলাম. সেখান থেকে আমাকে সরিয়ে নিয়ে গেল. দাদার সন্দেহ হচ্ছিল যে আমার জীবনও ওরা শেষ করে দিতে পারে. আমাকে দেহরাদুনে কনভেন্ট স্কুলে ভর্তি করে দিল. আমাকে সব বুঝিয়ে বলল. কি ধরনের বিপদ হতে পারে. ঠাকুরদা, ঠাকুরমা সব জানলেন এবং দাদার কাজের কিছু বিরোধ করলেন না. আমাকে বলে দিয়েছিল যেন আমি নিজের বাড়ি, বা বাবার মারা যাবার কারণ এগুলো ঠিক করে না বলি. দাদার পড়া শেষ হয়ে গিয়েছিল. আর পড়া শেষ হবার আগেই চাকরি পেয়ে গিয়েছিল. তাই দাদার বিয়ে করতে কোনো অসুবিধা ছিল না. যে রোগ বাঁধিয়ে ছিল তাতে যে বেশি দিন বাঁচতে পারবে না. ওই মেয়েটিকেই বিয়ে করেছিল. দাদা ভালোবেসে বৌদিকে বিয়ে করে নি. নিজের সমব্যথী পাবার জন্যে করেছিল. মেয়েটির অবস্থা বড্ড খারাপ ছিল. বৌদি বেশি দিন বাঁচেও নি. রোগ হবার জন্যে ও নিজে থেকেই খদ্দের নিতে চাইত, তার ওপর যারা ওর রোগের খবর জানত তারা ওর কাছ ঘেঁসত না. ফলে ওর টাকা ছিল না. সুবোধ অনেক টাকার লোভ আর ভয় দেখিয়ে ওকে দাদার সাথে সেক্স করাতে রাজি করেছিল. যৌনপল্লীতে অনেক দালাল থাকে. তারা অনেক নোংরা কাজ করে পয়সার জন্যে. তাদের দিয়েই সুবোধ এডসওয়ালা যৌনকর্মীর খোঁজ নিয়েছিল আর ব্যবহার করেছিল. দাদা চাকরি পেয়ে কয়েক দিন চাকরি করলো. নামী ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভারসিটি থেকে পাশ করাতে অনেক মাইনে পেত. সেই টাকায় ও বৌদির চিকিত্সা করা ছাড়াও ওই এলাকার অনেক ভালো কাজ করিয়েছিল. তাছাড়া টাকার অভাব দাদার ছিল না. ওর নামে অনেক টাকা আগে থেকেই জমানো ছিল. সেটা খরচ করত. সরকারের যা কর্তব্য তা করে না বা করতে পারে না. কিন্তু তার জন্যে আমরা মানে জনসাধারণ ভুগি. আর সেটা নিষিদ্ধ পাড়া হলে তো কথায় নেই. চারিদিকে নোংরা. জলের ভালো ব্যবস্থা নেই. ছোট বাচ্ছারা স্কুল যায় না. এরকম অনেকগুলো কাজ দাদা নিজের উদ্যোগে করেছিল বা করার চেষ্টা করেছিল. লোক লাগিয়ে নোংরা জায়গা যতটা পারা যায় পরিস্কার করেছিল. ওর এক বন্ধুর মা NGO চালাতেন. তাকে বলে ওখানের বাচ্চাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিল. ফলে দাদাকে ওখানের লোকজন আপন মনে করত, ভালবাসত. যারা দাদার সর্বনাশ করতে সুবোধদের সাহায্য করেছিল তারা লজ্জা পেল এবং ক্ষমা চাইল. আমার ১০ ক্লাসের পরীক্ষা হয়ে যাবার পড়ে দাদা আমাকে ওর কাছে নিয়ে গেল. ততদিনে আমি বেশ বড় হয়ে গেছি. দাদা আমাকে সব কিছু খুলে বলল. তোমার কথা, বাবা মায়ের কথা, খোকাইয়ের কথা, সুবোধের কথা, সুপ্রীতি বৌদির কথা. তারপরে তোমাকে সুবোধের খপ্পর থেকে উদ্ধার করার জন্যে আমাকে কাজে লাগলো. দাদার বিশ্বাস ছিল যে যদি জানতে পারে যে খোকাই ওর ছেলে নয় তাহলে রান্তা আর খোকাই দুইজনেরই ভীষণ বিপদ. সুবোধ পারে না এমন বাজে কাজ নেই. সুবোধ জানত না যে খোকাই ওর ছেলে নয়. নিজের ওপর একটা নির্বোধ অহংকার ছিল. দেখে কিছু বোঝা যায় না, কিন্তু ও যে কত বড় হার বজ্জাত!!! বাসু যে সুবোধের দোকানের কর্মচারী.. তার কাছে থেকে দাদা খবর পেত. বাসু আগে বাবার সময়েই কাজ করত. ওর ওপর সুবোধ ভরসা করত. আর ভরসা করত নিতাইয়ের ওপর. বাসুদা সেই ভাবেই চলত যেভাবে চলে সুবোধ সন্তুষ্ট থাকবে, ওর ওপর সুবোধের কোনো সন্দেহ থাকবে না, নিশ্চিন্তে দাদাকে প্রয়োজনীয় খবর পাচার করবে. বাসুদা বাবার মৃত্যু মেনে নিতে পারে নি. ও নিশ্চিন্ত ছিল যে এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত খুন. এটার বিহিত হোক. তাই সে সুবোধের কাছে থেকে ওর সর্বনাশের চেষ্টা করছিল.

বাসুদা মালতির কাছে থেকে তোমার খবর নিত. আর যখন সুবোধের জন্যে দুপুরের খাবার আনত তখন তোমার অবস্থা দেখতে পেত. সেই মত দাদাকে সব জানাত. তোমাকে দাদার খবর বলত না. কোনো কারণে তোমাদের সাথে মানে, বাসুদা, তুমি বা মালতির সাথে যোগাযোগ আছে জানলে তোমাদের বিপদ হতে পারত. ছোটবেলা থেকেই আমার সাহস অনেক বেশি. তোমার সাথে দেখা হবার আগে শেষ যেবার দাদা মাসির বাড়ি মিকুনি গিয়েছিল সেবার আমি আর মাও গিয়েছিলাম. সেবার আমাকে সাপে কামড়ে ছিল. আমি কোনো রকম ভয় না পেয়ে সটান জানিয়েছিলাম যে সাপে কামড়েছে. তখন সুজয় বলল কোথায়? আমি বললাম কলের পারে. সাপটা তখন ছিল. সুজয়দা দেখে বলল, ও ধোড়া সাপ কিছু হবে না. কিছু হয় না সে সবাই জানে. সাপের কামড়ে বিষক্রিয়ার থেকে আতঙ্ক-ক্রিয়া কিছু কম না. হইচই তো হয়ই. কিন্তু ওই রকম বছর আটেকের ছেলে যদি কান্নাকাটি না করে স্বাভাবিকভাবে জানায়... সেটা সাহস দেখানোর পরিচয় বটে বৈকি. আর কিছু ঘটনা ঘটে যা থেকে দাদা সমেত বাড়ির সবার ধরনা হয়েছিল যে আমি সাহসী. দাদা পুরো পরিকল্পনা করেছিল যাতে আমি সুবোধকে শাস্তি দেব বা তোমাকে ওর থেকে বিচ্ছিন্ন করব. তোমার সাথে যা আমি করেছি সেটা প্রথমত পরিকল্পনা মাফিক হয়েছিল. আমি অত্যন্ত দুঃখিত যে তুমিও না জেনে এই ঘটনার মধ্যে জড়িয়ে গেছ. কিন্তু আস্তে আস্তে তোমাকে যখন জানলাম তখন না ভালোবেসে পারিনি. দাদা সত্যি একই সাথে ভাগ্যবান আর দুর্ভাগ্যবান. তোমার প্রথম প্রেম দাদা... তাই সেই ভাগ্যবান. যে অত্যন্ত সৎ প্রেমিকা হিসেবে. যে তার প্রেমিকের ভিতুদিক না দেখে প্রেমিকের কথা মত তাকে ছেড়ে দেয়. আর দুর্ভাগ্যবান যে তোমার সাথে বাকি জীবন কাটাতে পারল না. দাদার কোনো পরিকল্পনায় ছিল না যাতে তোমার কোনো অসম্মান হয় বা কষ্ট হয়.
মালতি তোমার কাজের মাসি. কিন্তু সে অত্যন্ত কাজের লোক ছিল আমাদের জন্যে. তোমাকে উত্তেজিত করার জন্যে ওকে অনেক মিথ্যে কথা বলতে হয়েছে. আমি তার জন্যে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি. এটা সত্যি যে মালতির ছেলে দুটো পড়াশুনায় খুব ভালো. তার জন্যে ওদের অনেক টাকা দরকার. তাছাড়া আর কোনো কিছু সত্যি নয়. আসলে ওর কোনো দেওর নেই. ফলে যেসব গল্প তোমাকে বলত সেগুলো শুধুই গল্প. শুধু তোমাকে উত্তেজিত করার জন্যে. অনেক দিন ধরে তোমাকে বলে বলে একটা না পাওয়ার কথা তোমার অবচেতন মনে গেঁথে দিয়েছিল. ওই ছিল তোমার একমাত্র বন্ধু যাকে অনায়াসে অনেক কিছু বলতে পারতে. তোমার না পাওয়া. স্বামীর সান্নিধ্য ছাড়া জীবন. এগুলো আমাদের পাচার করত মালতি. তার জন্যে অবশ্য ওকে পয়সা দিয়েছে দাদা. ওর ছেলেদের পড়ার খরচ সব আমাদের. তোমার সাথে আমার প্রথম সাক্ষ্যাত যেটা হয়েছিল তার জন্যে অনেকটাই মালতি দায়ী. ওই বলেছিল তোমাদের জলসা দেখতে যাবার কথা, তুয়ার জন্মদিনের কথা. অবশ্য কেন এসব তথ্য নিতাম তা জানত না. তোমার সাথে যে আমার শারীরিক সম্পর্ক ছিল সেটা ও জানত না. আর বাসুদা খবর দিত ওর ব্যবসা সংক্রান্ত. সব থেকে বড় বজ্জাত ছিল নিতাই. সুবোধের সোনার ব্যবসা পেয়েই ওর খিদে মিটে যায়. ও সত্যিই সোনার কারবার ভালবাসত. কিন্তু তার জন্যে কাউকে খুন করা কখনই ঠিক নয়. তাই ও যখন দোকানটা পেয়ে গেল তখন ও ওটা নিয়েই মেতে থাকলো. ও তার উন্নতি করলো. নিতাই যে, আমার ধরনা, সুবোধের পাপের মধ্যে জড়িত ছিল সে শুধু ভোগ করে গেল. কোনো দায়িত্ব নেই. শুধু ভোগ. থাকত ড্রাইভার হয়ে. কিন্তু ছিল রাজার চলন. আমাদের সোনা ছাড়াও আরও অনেকগুলো কারবার ছিল, তাই সুবোধ যখন ওটা দখল করে নিল আমদের আর্থিক অবস্থার কোনো হের ফের হয়নি. আর আমাদের সৌভাগ্য যে অন্য কোনো ব্যবসা থেকে আর কোনো সুবোধ বেরয় নি. তাহলে শেষ হয়ে যেতাম. অন্য ব্যবসা যাদের দায়িত্ব ছিল তারা সময় মত টাকা দিয়ে যেত. বাবা মায়ের মৃত্যুর ধাক্কা কাটাতে ঠাকুরদার অনেক সময় লেগেছিল. সেটা সামলানোর পরে ঠাকুরদাই ব্যবসা চালাতেন. আর বাড়ান নি, বরঞ্চ কিছু কমিয়ে দিয়েছেন. ওই টাকা থেকেই নিতাই ফুটানি মারত. ঠাকুরদা, ঠাকুরমা বয়সের জন্যে নিতাইয়ের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন. ওই সব দেখত আর ভোগ করত. নিতাইকে দাদা কাজ থেকে ছাড়াতে পারে নি.”

রমনা বলল, "আচ্ছা আমার একটা জিগাস্য আছে. যদি জানতেই যে সুবোধ আর নিতাই মিলে তোমার বাবা মা কে খুন করেছে, তবে পুলিসের কাছে গেলে না কেন?"
অতনু বলল, "খুন করেছে তার কোনো প্রমান আমাদের কাছে ছিল না. যে ড্রাইভার ছিল সেও মারাত্বক জখম ছিল. তার মানে সে যে দুর্ঘটনার মধ্যে পড়েছিল সেটা ঠিক. এমন এক্সিডেন্ট যেখানে ষড়যন্ত্রকারীর জীবন বিপন্ন এমনকি জীবনহানির মত অবস্থা হয় সেখানে তার বিরুদ্ধে খুনের মামলা করা কঠিন ছিল. সুবোধের ওই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কোনো প্রমান পাই নি. ঠাকুরদা, ঠাকুরমা এতটাই ভেঙ্গে পড়েছিলেন যে তাদের পক্ষে সেই সময়ে কিছু করা সম্ভব ছিল না. আমি ছোট ছিলাম. ধর্তব্যের মধ্যে ছিলাম না. দাদা যে কেন কিছু করে নি জানি না. হয়ত সুবোধ তোমার স্বামী,

তোমার নতুন ঘর ভাঙ্গতে চায় নি. তোমার ঘর ভাঙলে হয়ত তোমার বাবা দাদার ওপর মিথ্যা ধারণা করত. ইচ্ছা করে সুবোধের ঘাড়ে দোষ দিয়ে রান্তার সংসার ভাঙ্গার চেষ্টা করছে. আমাদের যে উকিল ছিল সেও জোরাল কিছু বলে নি. পুলিসকে বলে দুইচার ঘা লাগালেই অনেক তথ্য বেরোত ওদের কাছে থেকে এবং ধীরে ধীরে সত্যও বেরোত."
রমনা বলল, "তুমি এতোদিন কোথায় ছিলে?"
অতনু বলল, "সেই কথাই তো বলছিলাম. তোমার ঘর ভাঙ্গার জন্যে শ্যামলী বৌদি অনেক সাহায্য করেছে. আমরা যে সেদিন ধরা পরলাম সেটা পরিকল্পনার অংশ ছিল. পরিকল্পনা মাফিক তুমি শ্যামলী বৌদির বাড়িতে থাকতে শুরু করেছ. তোমার যাতে কোনো অসুবিধা না হয় তার জন্যে বৌদির যথাযত করার কথা. তোমাকে কাজের লোকের মত করে রাখার পিছনে যুক্তি ছিল যে সুবোধ যদি জানতে পারত যে ওর সম্মান নষ্ট করার জন্যে আমি এইসব করছি, তাহলে তোমার, খোকাইয়ের আর আমার জীবন শেষ হয়ে যেতে পারত. তোমাদের ডিভোর্সের পর সুবোধ বেঁচে থাকলেও তোমার জীবন শেষ হয়ে যেত. ও তোমায় ছাড়ত না."
রমনা বিশ্বের কোন কোণে পড়ে আছে যে কোনো খবরই জানে না. রমনা অবাক করা গলায় জিজ্ঞাসা করলো, "সুবোধ মারা গেছে?"
অতনু বলল, "হ্যাঁ, ও সুইসাইড করেছে."
রমনার সুবোধের মৃত্যু সংবাদ শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল না. অতনুর কথা থেকে এটা পরিস্কার যে ও একটা নরাধম. যে সম্পতির জন্য মালিকের জীবন নিতে পারে, স্ত্রীর প্রেমিককে, যে কিনা সেই মালিকের ছেলেও, ওই রকম তিলে তিলে মরার পথে চলতে বাধ্য করে তার জন্যে অর দুঃখ নেই. যে কোনো মৃত্যু সংবাদই দুঃখের. তাই একটু দুঃখ হলো. কিন্তু নিজের প্রাক্তন বরের জন্যে কোনো দুঃখ নেই. চোখ দিয়ে কোনো জলের ধারা নামল না.
রমনা আবার জিজ্ঞাসা করলো, "বলো, তুমি কোথায় ছিলে?"
অতনু বলল, "সেই কথাই তো বলছিলাম. আমি ক্ষমা করাতে বিশ্বাস করিনা. হামুরাবির আইন আমার ভালো লাগে. ছোটবেলায় আমরা পড়েছিলাম না যে হামুরাবি আইন ছিল হাতের বদলে হাত আর চোখের বদলে চোখ. সুবোধ যেমন দাদার এডস বাঁধিয়ে দিয়েছিল আমিও ওকে সেই যন্ত্রণা দিতে চেয়েছিলাম. সেইদিন তোমার কাছে থেকে পালিয়ে কলকাতার দক্ষিনে সেই জায়গাতে গেলাম যেখানে দাদা বৌদি থাকত. যে সব দালাল দাদার সর্বনাশ করেছিল, তারা লজ্জা পেত আমাকে বা দাদাদের দেখলে. যাইহোক আমি ওদের পরিকল্পনার কথা বললাম. ওদের দিয়ে সুবোধের কাছে খবর পাঠালাম যে শান্তনুর ভাই অতনু ওখানে এসেছে. সুবোধ অনেক চেষ্টা করেও অতনুকে মারতে পারে নি. দাদা সময় মত আমাকে হোস্টেলে না পাঠালে হয়ত আমিও স্বর্গবাসী হয়ে যেতাম. আর এই শহরে যখন এলাম তখন তো আমার চেহারার অনেক পরিবর্তন. ফলে সেই শিশু অন্তুর সাথে যুবক অতনুর কোনো মিল নেই. যখন শুনলো যে আমি ওখানে আছি, তখন সেই দালালদের দিয়ে আমাকে বন্দী বানানো হলো. আমিও ওদের বললাম আমাকে বন্দী করে রাখতে. একটা ঘরে বন্দী হয়ে থাকলাম. সুবোধ এলো সেই ঘরে. সুবোধ জানত না যে যারা আমাকে বন্দী বানিয়েছে তারা আসলে আমার লোক, ওর লোক নয়. তাই সেইবাড়িতে আসা মাত্র শিকার আর শিকারী পাল্টে গেল. সুবোধ হলো শিকার. দাদার সাথে যা করেছিল আমিও সেই ব্যবস্থা করলাম. ওই দালালরাই আমার চাহিদা মত এডস রোগীর সাথে জোর করে সুবোধের শারীরিক সম্পর্ক করাল. বেশ কয়েকবার. দালালরা নিজের পাপ মুক্ত মনে করলো. আগের বারের নির্দোষ লোককে পয়সার জন্যে শাস্তি দিয়ে যে পাপ করেছিল এবারে তার স্খালন হলো. অবশ্য এবারেও পয়সা পেয়েছিল. সুবোধ এই ব্যথা নিতে পারেনি. মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে রেলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে নেয়. তবে মরার আগে পর্যন্ত আমাকে কুত্তার মত খুঁজেছে. পেলেই মেরে ফেলত. সেদিন ধরার চেষ্টা করেনি কারণ ওর বিশ্বাস ছিল যে পরে আমাকে ধরে শাস্তি দিতে পারবে. শ্যামলী বৌদি আমার কথা মত আমার গ্যারাজের খবর আর আমার বাসার খবর দিয়েছিল. কিন্তু আমাকে বাসুদা বা মালতি সময় মত জানিয়ে দিত. তোমাদের নিশ্চিন্তে শ্যামলী বৌদির বাড়িতে রেখে গিয়েছিলাম. যতদিন তোমরা এখানে থাকবে বৌদির কাছে থাকবে, ভালো থাকবে. কোনো বিপদ নেই৷ আর সুবোধ বৌদিকে সন্দেহ করেনি. ভাবতেই পারেনি যে বৌদি আমার সাথেকাজ করতে পারে."রমনা বলল, "শ্যামলিদী কেন তোমাকে সাহায্য করলো?"
অতনু বলল, "মনে আছে যেবার শ্যামলী বৌদির সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল?"
রমনা বলল, "হ্যাঁ, মনে আছে. তুমি ওকে জামতলার মাঠে দেখা করার কথা বলেছিলে. তারপরে আমি আর কিছু জানি না."
অতনু বলল, "বৌদির দৈহিক চাহিদা মারাত্বক. ওর বর ওকে ছেড়ে দিয়েছে. যা খুশি করুক গে. কারণ ও নিজে সামলাতে পারত না আর মাঝে মাঝে নিজের স্বার্থে ওকে ব্যবহারও করেছে. বৌদি ছাড়া পেয়েও সামাজিক মর্যাদা রক্ষা করে নিজের কাজ কর্ম সারত. আমি ওকে নাজিবুলকে দিয়েছিলাম. ওর সাথে বৌদি অত্যন্ত সুখী ছিল. নিশ্চিন্ত ছিল. তাই আমাকে সাহায্য করতে ওর কোনো বাধা ছিল না. আমাকে যেন নাজিবুলকে দেবার জন্যে ধন্যবাদ জানাত. তোমাকে ইচ্ছে করেই এত দিন এবাড়িতে কাজের লোক করে রাখা হয়েছিল. যাতে কোনো মতেই সুবোধের কোনো সন্দেহ না হয়. আমার এইটুকু সময় লাগত. কিন্তু তোমার এই অবস্থায় থাকার জন্যে আমার যে কি মানসিক অবস্থা হয়েছিল সেটা বোঝাতে পারব না. আমায় ক্ষমা কর. বৌদি তোমাকে আমার কোনো কথা বলেনি সেটা আমিই বারণ করেছিলাম. কোনো রকম ঝুঁকি নিতে চাইনি. তুমি মানসিকভাবে খুব নরম. যেকোনো ভুল পদক্ষেপ দাদার পরিকল্পনার বারোটা বাজিয়ে দিতে পারত."
"নিতাইয়ের কি হলো?" রমনা জানতে চাইল.
"হামুরাবির আইন মত ওরও গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হবার কথা. তাই হয়েছে. বিস্তারিতভাবে জানতে চেয় না." অতনু জবাব দিল.
রমনা বলল, "আর একটা কথা, তুমি এত এক্সপার্ট হলে কি করে?"
অতনু হেসে বলল, "কিসে? ওহ ওহ ... আমার ট্রেইনিং হয়েছিল. দাদার কথা মত আমি ওদের সাথে ছিলাম অনেকদিন. ১০ ক্লাসের পরীক্ষার পর দাদা বলেছিল যে ওর আর বেশি সময় নেই. তাই যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে. বলেছিল, 'ভাই ডিগ্রী পাবার জন্যে পড়ার দরকার নেই. তোকে চাকরিও কোনদিন করতে হবে না. যদি শখ থাকে পড়ার জন্যে তবে অবশ্যই পড়বি. তুই এখানে গ্যারাজে কাজ শেখ আর বৌদির কাছে অন্য একটা কলা শেখ. এইদুটো শিখলেই তুই আমার পরিকল্পনা সফল করতে পারবি.' সেই মত আমি ওখানে কাজ শিখতে লাগলাম. আর বৌদি আমাকে সব কলা কৌশল শেখালো. নিজে যেহেতু যৌনকর্মী ছিল তাই দাদার পরিকল্পনা সফল করার জন্যে আমার সাথে সম্পর্ক ভুলে গিয়ে সব শেখালো. প্রাকটিক্যালও শেখালো. তোমার বয়সী একজনকে এনে নিয়েছিল. মহিলাদের কিভাবে তৃপ্ত করতে হয়, মহিলারা কি চায়, কিভাবে দীর্ঘসময় চালিয়ে যাওয়া যায় সব কিছু. বৌদি তো বলত, 'তোমার টা যা বড় তাতে একবার কোথাও ঢুকলে সে দ্বিতীয়বার না নিয়ে পারবে না'. তোমার সাথে সম্পর্ক তৈরী করে তোমাকে আমার সাথে রাখার জন্যে দাদাই বলেছিল. তোমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক তৈরী করবার আগে আমি টেস্ট করে নিয়েছিলাম. আমার এডস বা ওই জাতীয় কোনো রোগ নেই. আমি শুধু ওর পরিকল্পনা মাফিক কাজ করে গেছি. কিন্তু মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ বোধ হয় সব থেকে কঠিন. দাদাকে বলে দিতে হয় নি. কিন্তু তোমাকে না ভালোবেসে পারা যায় না. আফসোস দাদা ওর পরিকল্পনার শেষটা দেখতে পেল না. আর হ্যাঁ, দাদা ঠাকুরদা, ঠাকুরমার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল. না করলে আসতে আসতে খবরটা তোমার কান পর্যন্ত যেতে পারত. আর এডস রোগীর সামাজিক অবস্থানও অনেক নেমে যায়."
অতনু বলল, "রমনা, অনেক হয়েছে পুরনো কথা. নতুন জীবনের জন্যে কিছু ভাবলে? তুমি আমাকে বিয়ে করবে?"



ওর সরাসরি প্রস্তাব শুনে লজ্জা পেল. রমনা বলল, "তুমি আমার মত বুড়িকে কেন বিয়ে করবে? এখনো বুড়ি না হলেও তো কয়েক বছর পর হব. তখন তুমি বুড়ো হবে না."
অতনু বলল, "আমি দৈহিক চাহিদার কথা ভেবে তোমাকে বিয়ে করতে চাইছি না. ও ব্যাপারে আমার খুব বেশি আগ্রহ নেই. সেটা আশা করি এত দিনে বুঝেছ. আমি দাদার পরিকল্পনা মতও তোমায় বিয়ে করতে চাইছি না. দাদার পরিকল্পনা অনুসারে সুবোধের শাস্তি দান আর তোমাকে আর খোকাইকে নিরাপদ রাখাই ছিল মূল লক্ষ্য. সেটা পূর্ণ হয়েছে.আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই তোমায় ভালোবাসি বলে. আর অন্য কোনো কারণ নেই. শুধু ভালবাসা."
রমনা বলল, "আমার একটাই চিন্তা খোকাই তোমায় কি ভাবে নেবে?"
অতনু বলল, "খোকাইয়ের চিন্তা কর না. আমি জানি ওর কোনো সমস্যা নেই. তোমার কি মত বল?"
রমনা বলল, "আমার মত কি আরও স্পষ্ট করে বলতে হবে? তুমি কি করে জানো খোকাইয়ের সমস্যা হবে না?"
অতনু বলল, "বাসুদা মাঝে মধ্যে ওকে আমার গ্যারাজে নিয়ে আসত. ওকে আমি গাড়ি চাপিয়ে অনেক ঘুরিয়েছি. আমাকে বেশ পছন্দ করে."
রমনা আশ্চর্য্য হওয়া গলায় বলল, "কই আমাকে তো কোনোদিন বলে নি? তুমিও তো বল নি?"
অতনু বলল, "ওকে বাড়ির কাউকেই বলতে নিষেধ করে দিয়েছিলাম. সুবোধ জানলে কি শুরু করবে জানতাম না. তোমাকে তো আমার কিছুই বলিনি. তোমার ভালবাসা পাবার আগে কোনো কিছুতেই নিশ্চয়তা ছিল না."
রমনা বলল, "তোমার ঠাকুরদা ঠাকুরমার কি খবর? মানে তারা কি বেঁচে নেই?"
অতনু বলল, "তারা বেঁচে আছেন. তুমি তাদের দেখেও ছিলে. সুবোধের বিয়ের সময় শুধু ওরা দুজনেই নিমতন্ন রক্ষা করতে গিয়েছিলেন. মা বা দাদা যাবার মত মানসিক অবস্থায় ছিল না. বাবা বোধ হয় শহরের বাইরে ছিলেন. কয়েকদিন আগেও তুমি ঠাকুরদা ঠাকুরমার সাথে দেখা হয়েছিল তোমার. আমি তোমার কাছে আসার আগে ওরা আমায় জানিয়েছেন."
রমনা বলল, "তুমি কাদের কথা বলছ?"
"আমি যে বাড়িতে ভাড়া থাকতাম তার মালিকদের কথা."
"তুমি নিজের বাড়িতে ভাড়া থাকতে?"
"থাকতে হয়েছিল. ভাড়াটে না সাজলে ওখানে থাকতেও পারতাম না. ঠাকুরদা আর ঠাকুরমার সাথে মাঝে মধ্যে দেখাও করতে পারতাম না. কতদিন পরে ওনাদের দেখছিলাম. ওরাও আমাকে চিনতে পারেন নি প্রথমে. আমার পরিচয় জানাতে সব ঠিক ঠাক হলো."
"তোমাকে ওরা ভাড়া দিলেন কেন? ওদের তো পয়সার দরকার ছিল না."
"আলসেমি করে যদি কিছু কমানো যায় তাহলে আরও একটু বেশি টাকার ফুর্তি করতে পারে.... এই ভেবে নিতাই আমাকে ভাড়া দিয়েছিল. ঠাকুরদাকে বলেছিল ঘরটা তো পরেই থাকে. আমি থাকলে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে থাকবে. আসলে নিতাইয়ের ওপর ওদের নিয়ন্ত্রণ ছিল না. তাই মেনে নিয়েছিলেন."
সব শোনার পরে অতনু জড়িয়ে অনেক সময় শুয়ে থাকলো রমনা. সন্ধ্যাবেলায় শ্যামলীরা সবাই ফেরত এলো. খোকাইকে নিয়ে পড়ল অতনু. রমনা শ্যামলীকে ফাঁকা পেয়ে বলল, "দিদি ধন্যবাদ. আমি সব শুনেছি. তোমার সাহায্য না পেলে কিছু হত না."
শ্যামলী বলল, "এর জন্যে কি দিবি? অতনুকে দিবি?"
রমনা ওর কথা শুনে চুপ করে গেল. শ্যামলী হা হা হেসে উঠে বলল, "মজা করলাম রে!!! নাজিবুল আমাকে খুব খুশিতে রেখেছে. আমি আর কাউকে চাই না. তোরা ভালো থাকিস."
রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ হলে অতনু রমনাকে বলল, "আমি কাল আসব. তোমাদের নিয়ে যাব আমার বাড়ি না আমাদের বাড়িতে."
রমনা অনেকদিন পর শান্তিতে ঘুমালো সেইরাতটা.

সমাপ্তি

Share This!


1 comment:

Powered By Blogger · Designed By Seo Blogger Templates